লিভার টনিক এর উপকারিতা, খাওয়ানোর নিয়ম, নাম, দাম
লিভার টনিক গরুর কলিজার বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে অত্যন্ত কার্যকরী। গরুর কলিজার একাধিক সমস্যা দূর করতে লিভার টনিক এর উপকারিতা অনেক। লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম, লিভার টনিক কেন খাওয়াবেন, নাম, দাম প্রত্যেকটি বিষয় সম্পর্কে থাকতে বিস্তারিত আজকের আর্টিকেলটিতে।
লিভার টনিক গরুর লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। গরুর যখন লিভারের সমস্যায় ভোগে, খাদ্য হজম করতে ব্যাহত হয়, পুষ্টি শোষণ, শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন নির্গমনের জন্য লিভার টনিক এর কার্যকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গরু যখন লিভার জনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভোগে তখন এই লিভার টনিক ব্যবহার করলে গরুর সুস্থ হয়। গরুর লিভারের সমস্যা দূর করতে, গরুর লিভার ফাংশন উন্নত করতে লিভার টনিক এর উপকারিতা প্রচুর। লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম, লিভার টনিক সম্পর্কে প্রত্যেকটি বিষয় জানতে পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ লিভার টনিক এর উপকারিতা - লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম
.
লিভার টনিকের প্রয়োজনীয়তা
লিভার টনিক গরুর শরীরে যকৃত (লিভার) এর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। লিভারের সমস্যা হলে গরুর খাদ্য হজম ব্যাহত হয়। গরুর শরীরে পুষ্টি শোষণ করতে পারে না। শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন নির্গমনের জন্য লিভার টনিক অত্যন্ত কার্যকরী। লিভার টনিক গরুর লিভারের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
কলিজা কৃমি গরুর লিভারে আক্রমণ করে ফলে গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে গরুর শারীরিক উন্নতি ব্যাহত হয়। এজন্য প্রয়োজন গরুকে বছরে কমপক্ষে ৪ বার কলিজা কৃমির ইনজেকশন করার পর লিভার টনিক সেবন করানো।
লিভার টনিক এর উপকারিতা
লিভার টনিক এর উপকারিতা অনেক। গবাদি পশুর জন্য লিভার টনিক লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। লিভার সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় লিভার টনিক অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। লিভার টনিক গবাদি পশুর জন্য অত্যন্ত উপকারী। লিভারের যেকোনো সমস্যায় গবাদি পশুকে লিভার টনিক সেবন করালে সে সমস্যা দূর হয়। লিভার টনিক এর উপকারিতা গুলো নিচে পয়েন্ট আকারে দেওয়া হলঃ
- হজম শক্তি বৃদ্ধি করে
- লিভার ফাংশন উন্নত করে
- ক্ষুধা বৃদ্ধি করে
- গবাদি পশুর শরীরের টক্সিন বের করে
- গরুকে সুস্থ করে
- গরুর ওজন বৃদ্ধি করে
- গরুর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক
- পুষ্টি শোষণের সহায়তা করে
হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ গবাদি পশু কলিজা কৃমিতে আক্রান্ত হলে অথবা লিভার জনিত সমস্যায় আক্রান্ত হলে হজম শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় গবাদি পশু যে কোন খাবার খেলে সহজে হজম করতে পারে না। পেট ফেপে যায়, যেকোনো খাবার খেলে বদহজম হয়। এমন গবাদি পশুকে লিভার টনিক খাওয়ালে এই সমস্যা গুলো দূর হয়।
লিভার ফাংশন উন্নত করেঃ কলিজা কৃমি লিভারে আক্রমণ করে অনেক গবাদি পশুর লিভার সংক্রমিত করে। অন্যদিকে গবাদি পশুর লিভার আক্রান্ত হলে গবাদি পশু দুর্বল হয়ে পড়ে। এমন সময় লিভার টনিক খাওয়ালে লিভার ফাংশন উন্নত হয়।
ক্ষুধা বৃদ্ধি করেঃ গবাদি পশুর লিভারের সমস্যা হলে গবাদি পশু কোন খাবার খায় না। অল্প সামান্য খাবার খেলে আর কোন খাবার খেতে পারে না। গবাদি পশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে। খাবার খেতে চায়না, অরুচি ভাব দেখা দেয়। এমন অবস্থায় গবাদি পশুকে লিভার টনিক খাওয়ালে ক্ষুধা বৃদ্ধি হয়।
গবাদি পশুর শরীরের টক্সিন বের করেঃ গরুকে লিভার টনিক খাওয়ালে লিভারের বিষাক্ত পদার্থ, ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, পরিবেশে কত দূষণ বের করতে সাহায্য করে। লিভার টনিক লিভারের ডিটক্সিফিকেশন প্রক্রিয়ার শক্তিশালী করে, ফলে গবাদি পশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
গরুকে সুস্থ করেঃ গুরু লিভার জনিত সমস্যায় পড়লে গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। পুষ্টিহীনতায় ভোগে, খাবার খায় না, দুধ উৎপাদন কমে যায়, মাংস উৎপাদন কমে যায়। এমন অবস্থায় গরুকে লিভার টনিক খাওয়ালে গরুর দেহে পুষ্টির চাহিদা পূরণ হয়। ফলে গরু দ্রুত সুস্থ হয় এবং সকল ধরনের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
গরুর ওজন বৃদ্ধি করেঃ লিভার টনিক গরুকে সেবন করালে গরুর শারীরিক পুষ্টিহীনতা গুলো দূর করে। গরুকে লিভার টনিক খাওয়ালে গরুর দ্রুত খাবার খায়। গরুর শরীরে পুষ্টি শোষণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। লিভার টনিক গরুর শরীরের ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি দুধ উৎপাদনে ও সাহায্য করে।
গরুর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়কঃ লিভার টনিকে থাকা উপাদান গরুর দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক। গরুকে লিভার টনিক সেবন করালে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও হরমোন নিঃসরণ উন্নত হয় ফলে দুধের পরিমাণ ও গুণগত মান উন্নত হয়।
পুষ্টি শোষণের সহায়তা করেঃ গরুকে লিভার টনিক খাওয়ালে গরুর শরীরের এনজাইম এর সঠিক উৎপাদন বৃদ্ধি করে। গরুর শরীর এনজাইম গুলো খাদ্যকে ভেঙে সহজপাচ্য ও শরীরের কোষের দ্রুত পুষ্টি পৌঁছে দেয়।
উপরে লিভার টনিক এর উপকারিতা গুলো দিয়েছি। এছাড়াও গবাদি পশুকে লিভার টনিক খাওয়ালে একাধিক উপকারিতা পাওয়া যায়। তাই আপনার গবাদি পশুকে ৩ মাস পরপর কমপক্ষে ১০ দিন ওজন অনুযায়ী লিভার টনিক খাওয়ান।
লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম
উপরে আমরা লিভার টনিক এর উপকারিতা গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কিন্তু লিভার টনিক খাওয়াতে হলে অবশ্যই লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম সম্পর্কে জানতে হবে। লিভার টনিক গবাদি পশুকে শারীরিক ওজনের উপর ভিত্তি করে খাওয়ানো হয়। প্রত্যেকটি কোম্পানির লিভার টনিক গুলোতে মাত্রা ও সেবন বিধি লিখা থাকে।
আপনার গবাদি পশুর শারীরিক ওজন অনুযায়ী দিনে একবার ২০-৪০ মিলি লিভার টনিক খাওয়াতে পারেন। একটানা ১৫ দিন খাওয়াতে হবে। তবে সবচেয়ে লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম হলো দৈহিক ওজন ১০০ কেজির জন্য প্রতিদিন ৪০ মি.লি করে ৮ দিন সেবন করান। এরপর এক সপ্তাহ বন্ধ রাখুন। এই এক সপ্তাহের মধ্যে গরুর কলিজা কৃমির জন্য ইনজেকশন করতে হবে।
এরপর পুনরায় আবার ৮ দিন গরুকে লিভার টনিক খাওয়াবেন। গবাদি পশুর দৈহিক ওজন অনুযায়ী প্রত্যেকটি লিভার টনিকে সেবন মাত্রা লেখা থাকে। সেবনমাত্রা অনুযায়ী অথবা ভেটেনারি চিকিৎসকের পরামর্শে লিভার টনিক খাওয়াতে পারেন। আশা করি লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম জানতে পেরেছেন।
গরুর লিভার টনিক কোনটা ভালো
লিভার টনিক এর উপকারিতা পেতে হলে অবশ্যই গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানো প্রয়োজন। কিন্তু কোন লিভার টনিক গরুকে খাওয়াবেন। গরুর লিভার টনিক কোনটা ভালো তা অনেকেই জানেন না। কেননা বাজারে অনেক কোম্পানির লিভার টনিক পাওয়া যায় সবগুলোই কি ভালো? না আপনি সব লিভার টনিক গরুকে খাওয়ালে ভালো ফলাফল পাবেন না।
বাজারে বেশ কিছু ভালো লিভার টনিক রয়েছে যেগুলো গবাদি পশুকে খাওয়ালে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। প্রথমে গরুকে ক্রিমিনাশক ইনজেকশন দেওয়ার পর লিভার টনিক খাওয়াতে হয়। বাজারে যে ভালো লিভার টনিক গুলো পাওয়া যায় তার একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলঃ
- Liva-Vet
- Renaliv
- Livatone
- Hepato vet
- Super liv
- Hepamin forte
- Hepa Amain
- Livomix vet
- Vetone liver tonic
উপরে দেওয়া এই লিভার টনিক গুলো বাজারে পাওয়া যায়। এই লিভার টনিক গুলো গবাদি পশুকে খাওয়ালে অত্যন্ত ভালো কাজ করে। তাই আপনি চাইলে উপরে দেওয়া এই লিভার টনিক গুলো আপনার গবাদি পশুকে খাওয়াতে পারে।
লিভা ভিট এর কাজ
লিভা ভিট মূলত একটি লিভার টনিক। এটি গরুর লিভার ফাংশন উন্নত করতে ব্যবহারিত হয়। লিভা ভিট এর কাজ গরুর লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করা। লিভাভিট গরুকে সেবন করালে গরুর লিভার পরিষ্কার ও কর্মক্ষম রাখে। লিভা ভিট গরুকে খাওয়ালে গরুর ক্ষুধা বাড়ায় ও হজম শক্তি উন্নত করে।
লিভা ভিট গরুর ওজন বৃদ্ধি ও দুধ উৎপাদনে সাহায্য করে। লিভা ভিট গবাদি পশুর ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া কমায় এবং শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করতে সাহায্য করে।
গরুকে লিভার টনিক খাওয়ার নিয়ম
গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম অনেকেই জানেন না। গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম ওজনের ওপর ভিত্তি করে খাওয়াতে হয়। দৈহিক ওজনের উপর ভিত্তি করে গবাদি পশুকে প্রতিদিন দিনে একবার ২০-৪০ মিলি পর্যন্ত লিভার টনিক খাওয়াতে হয়। একটানা ৮ দিন লিভার টনিক খাওয়ানোর পর কয়েকদিন বিরতি দিন।
এরপর পুনরায় আবার ৮ দিন গরুকে লিভার টনিক খাওয়ান। লিভার টনিক খাওয়ানো অবস্থায় গরু পাতলা পায়খানা করলে গরুকে লিভার টনিক খাওয়ানো বন্ধ রাখুন।
গরুর লিভার টনিক এর নাম দাম
অনেকে গরুকে লিভার টনিক খাওয়াবেন বলে গরুর লিভার টনিক এর নাম দাম সম্পর্কে জানতে চান। বাজারে বেশ কিছু কোম্পানির লিভার টনিক পাওয়া যায়। কোম্পানি, পরিমান ভেদে লিভার টনিক এর দাম কম বেশি হয়। ২০০ মিলি থেকে এক লিটার পর্যন্ত বোতলে লিভার টনিক পাওয়া যায়। এছাড়া কোম্পানি ভেদে এর চাইতেও বেশি পরিমাণে বোতল থাকতে পারে।
নিচে বেশ কিছু কোম্পানির লিভার টনিক এর নাম ও দাম এর তালিকা দেওয়া হলঃ
- Renaliv ১ লিটার দাম ২৮০ টাকা
- Livatone ১ লিটার দাম ৩২০ টাকা
- Hepato vet ১ লিটার দাম ২৭০ টাকা
- Super liv ১ লিটার দাম ২৯০ টাকা
- Hepamin forte ১ লিটার দাম ৩২০ টাকা
- Hepa Amain ১ লিটার দাম ২৯০ টাকা
- Livomix vet ১ লিটার দাম ৩০০ টাকা
- Vetone liver tonic ১ লিটার দাম ২৯০ টাকা
উপরে বেশ কিছু কোম্পানির গরুর লিভার টনিক এর নাম ও দাম এর তালিকা দিয়েছি। সময় ও স্থানভেদে উপরে দেওয়া লিভার টনিক গুলোর দাম কিছুটা কমবেশি হতে পারে। আপনি উপরে দেওয়া যে কোন লিভার টনিক গুলো অনলাইনের মাধ্যমে অথবা অফলাইনে কোন ভেটেনারি দোকান থেকে সহজে সংগ্রহ করতে পারবেন।
গবাদিপশুর লিভার টনিক পরিচিতি
লিভার টনিক এর উপকারিতা অনেক। গবাদি পশুর ক্ষেত্রে লিভার টনিক অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে লিভার টনিক সেবনে গরুর লিভার (কলিজা) এর বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়। বাজারে লিভার টনিক সিরাপ আকারে পাওয়া যায়। বিভিন্ন কোম্পানির বোতল এর ধরন অনুযায়ী ২০০ মিলি থেকে এক লিটার পর্যন্ত হয়।
তবে কোম্পানি ভেদে এটি কম বেশি হয়। বাজারে বেশ কিছু কোম্পানির গবাদি পশুর লিভার টনিক পাওয়া যায়। এর মধ্যে হ্যাপামিন ফর্টি, হেপাটো ভেট, লিভা ভেট, অন্যতম।
হেপাটোভেট লিভার টনিক দাম
হেপাটোভেট লিভার টনিক উৎপাদনকারী কোম্পানির নাম একমি ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড। হেপাটোভেট লিভার টনিক বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে কৃমিনাশকের পর হেপাটো ভেট লিভার টনিক অত্যন্ত কার্যকরী। গবাদি পশুর লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে হেপাটোভেট অত্যন্ত উপকারী।
বাজারে বিভিন্ন আকারের বোতলে হেপাটোভেট লিভার টনিক পাওয়া যায়। ২০০ মিলি - ১ লিটার পর্যন্ত হেপাটোভেট লিভার টনিক পাওয়া যায়। ১ লিটার হেপাটোভেট লিভার টনিক এর দাম ২৮০ টাকা।
লেখকের মন্তব্য
গবাদি পশুর লিভারের সমস্যা দূর করতে লিভার টনিক অত্যন্ত উপকারী। তাই আপনার গবাদি পশুর লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে কমপক্ষে তিন মাস পর পর পরিমাণ মতো লিভার টনিক সেবন করান। এতে আপনার গরুর সুস্থ থাকবে এবং দুধ ও মাংসের উৎপাদন ক্ষমতা সঠিক মাত্রায় থাকবে। আজকের পুরো আর্টিকেলটিতে লিভার টনিক এর উপকারিতা,
লিভার টনিক খাওয়ানোর নিয়ম, লিভার টনিক সম্পর্কে প্রত্যেকটি বিষয়ে সঠিক তথ্য শেয়ার করেছি। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। নিয়মিত এরকম গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করুন। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ